ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? – সম্পুর্ন গাইডলাইন

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? – সম্পুর্ন গাইডলাইন

আমি আজকে আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি (What is Web Development)? ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কীভাবে কাজ করে, এটি শিখতে কত দিন লাগে ওয়েব ডেভেলপার হওয়ার জন্য কি কি জানতে হবে, প্রতিদিন কতক্ষণ সময় দিলে একজন ওয়েব ডেভেলপার হওয়া যাবে ইত্যাদি সকল কিছু আপনি জানতে পারবেন এই একটি আর্টিকেলের মধ্যে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি? - What is Web Development

যে ব্যক্তি ওয়েবসাইট তৈরি বা ডেভেলপ করে তাকে বলা হয় ওয়েব ডেভেলপার (Web Developer) এবং এই ব্যক্তি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা থেকে শুরু করে ইন্টারনেটে লাইভ করা পর্যন্ত যে কাজ করে থাকে সে সকল কাজকে একসঙ্গে বলা হয় ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। আরো সহজ করে যদি বলি তাহলে, আপনি এখন ‘ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি’ এই আর্টিকেলের যে তথ্য গুলো পড়তেছেন সেই তথ্যগুলো একটি সার্ভারে জমা রাখা হয়েছে এবং সেই তথ্য গুলো ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে আপনাকে দেখানো হচ্ছে এটিকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলে।

শুধু যে তথ্য জমা রাখা এবং সেগুলো ইন্টারনেট ও ব্রাউজারের মাধ্যমে দেখানোকেই যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। একটি ওয়েব সাইট তৈরি করতে বা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে অনেক বিষয় জানতে হয় শুধু তথ্য লেখা ও তথ্য জমা করলে কাজ শেষ হয়ে যায় না। চিন্তার কোন কারণ নেই, নিচে আমি সেই সকল বিষয়গুলো নিয়ে ও আলোচনা করেছি। আপনি ধৈর্য ধরে আর্টিকেলটা শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে একদম কিছু না জানেন তাহলে এই আর্টিকেলটা আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। এর আগে আপনাকে বলে রাখি, বর্তমানে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ও লাভজনক পেশা। অনেকেই, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে প্রচুর টাকা ইনকাম করে থাকে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কত প্রকার?

আপনাকে আগেই বলেছিলাম, শুধু তথ্য দেখানোকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলে না। ওয়েবসাইট এর ডিজাইন অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি দেখতে কেমন হবে, ওয়েবসাইটের লোগো কোথায় থাকবে, ওয়েবসাইটের মেনুবার কোথায় থাকবে, ওয়েবসাইটের ছবি, টেক্সট, ভিডিও কিভাবে এবং কোথায় থাকবে, ইউজাররা কমেন্ট কিভাবে করবে, ইউজাররা ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন ও লগইন কিভাবে করবে, ওয়েবসাইটের কালার কি হবে, ইউজারের তথ্য কোথায় জমা থাকবে ইত্যাদি শত শত বিষয়ই মিলেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট হয়ে থাকে। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর এই শত শত কাজ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকে, যেমন ওয়েবসাইটের ডিজাইন করা (ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে), ওয়েবসাইটের তথ্য গুলো কোথায় হোস্ট বা জমা রাখা হবে ইত্যাদি।

সাধারণত, আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কে দুই ভাগ ভাগ করে থাকি, যেমন; ১. ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্ট (Front-End Development), ২. ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্ট (Back-End Development)।

আমরা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কে দুই ভাগ ভাগ করে থাকলেও, এটিকে আরো অনেক ভাগে ভাগ করা যায়। চিন্তার কারণ নেই এগুলো সম্পর্কেও আমি নিচে বর্ণনা করব। আপনি যদি একদম নতুন হয়ে থাকেন অর্থাৎ ওয়েবসাইট কি? এই খায় নাকি গলায় দেই এইসব যদি না জেনে থাকেন তাহলে আপাতত জেনে রাখুন ইন্টারনেট ও ব্রাউজারের মাধ্যমে যে সকল তথ্য দেখানো হয় সেটা হলো ওয়েবসাইট, একটি ওয়েবসাইট শুরু থেকে ইন্টারনেটে দেখানো পর্যন্ত যে কার্যক্রম হয়ে থাকে সেটা হলো ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং যে ব্যক্তি এটি কাজটি করে থাকে তাকে বলা হয় ওয়েব ডেভেলপার। আশা করি আপনি এইটুকু বুঝতে পেরেছেন। এটুকু বুঝতে পারলে আপনি অনেকটা জেনে গেছেন।

আবারো বলে রাখি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সাধারণত আমরা দুইভাবে ভাগ করে থাকি, অর্থাৎ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ২ প্রকার একটি হলো ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (Frontend Development) এবং অন্যটি হলো ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্ট (Backend Development)। আবার ফ্রন্ট-এন্ড এবং ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট মিলেই বলা হয় ফুল স্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট (Full Stack Development)। সে কারণে অনেকেই বলে থাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ৩ প্রকার।

যাইহোক, নিচে আমি এখন এই তিনটি স্ট্যাক সম্পর্কে এ টু জেট বিস্তারিত ব্যাখ্যা করব, ধৈর্য্য ধরে আর্টিকেলটা পড়তে থাকুন। আশা করি এই আর্টিকেলটা আপনাকে অনেক উপকার করবে এবং এই আর্টিকেলটা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে ভুলবেন না।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কত প্রকার ও কি কি?

আমরা ইতিমধ্যে জানি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট দুই প্রকার, সেগুলো হলো:

  1. ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্ট (Frontend Development)
  2. ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্ট (Backend Development)

এখন একসাথেই ফ্রন্ট-এন্ড এবং ব্যাক-এন্ড দুটি নিয়ে কাজ করাকেই বলে ফুলস্ট্যাক ডেভেলপমেন্ট (Full Stack Development)। তাই, আপনি চাইলে বলতে পারেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ৩ প্রকার। যাইহোক, আসুন এবার আমরা এগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্ট (Frontend Development)

ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্ট হলো একটি ওয়েবসাইটের সেই অংশ তৈরি করার কাজ, যা সাধারণ ইউজাররা চোখে দেখে এবং সেটা ব্যবহার করে। একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন, লেআউট, ফন্ট, রং, বাটন, মেনু, ছবি, অ্যানিমেশন — সবই ফ্রন্টএন্ডের অংশ।

যদি, আরো সহজ করে আপনাকে বুঝায় তাহলে খেয়াল করুন আপনি এখন (আবদুল্লাহ আল সিফাত) এই ওয়েবসাইটে ‘ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কি’ এই আর্টিকেলটা পড়তেছেন তাই না এই ওয়েবসাইটের টেক্সট থেকে শুরু করে ছবি, ডিজাইন, রং, বাটন, মেনু বার যাই দেখছেন সব হচ্ছে Front-End এর অংশ। আর এটাকেই বলে Front-End ডেভলপমেন্ট, মানে একজন ডেভেলপার ইউজারকে দেখানোর জন্য যে কাজটি করে থাকে সেটাকে বলে Front-End ডেভেলপমেন্ট।

কিন্তু, আপনি কি এখন দেখতেছেন, এই ওয়েবসাইটের তথ্য গুলো কোথায় জমা রাখা রয়েছে। এই ওয়েবসাইট কিভাবে এবং কি দিয়ে বানানো হয়েছে, এসব তথ্য নিশ্চিত আপনি দেখছেন না। তার, মানে এই ওয়েবসাইটের পিছনে কি কি রয়েছে সেটা দেখতে না পারাকে ফ্রন্ট-এন্ড বলে না। আপনার কাছে কথা গুলো অগোছালো বা অদ্ভুত মনে হলেও এটা বাস্তব, তাই আর্টিকেলটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন অনেক কিছু জানতে পারবেন।

এখন, আসুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট কিভাবে করা হয়, একজন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার হতে কি কি জানতে হবে? ইত্যাদি সকল বিষয় সম্পর্কে।

ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্ট এ ব্যবহৃত প্রধান ভাষা গুলো হলো

  • HTML (HyperText Markup Language): এটি ব্যবহার করা হয় ওয়েবপেজের কঙ্কাল বা কাঠামো তৈরি করার জন্য। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, একটি ঘর বানাতে প্রথমে লোহা, ইট, সেমিন্ট ইত্যাদি লাগে এগুলো দিয়ে সাধারণত ঘর বানানো হয় কিন্তু শুধুমাএ এগুলো দিয়ে সম্পূর্ণ ঘর বানানো সম্ভব না।
  • CSS (Cascading Style Sheets): ওয়েবপেজের ডিজাইন বা স্টাইল করতে ব্যবহৃত হয় — যেমন: রঙ, ফন্ট, সাইজ, লেআউট, পজিশন ইত্যাদি। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, লোহা, ইট, সেমিন্ট ইত্যাদি দিয়ে তো ঘর বানানো হয়ে গেছে, এবার ঘরকে সুন্দর করতে দরকার রং, ডিজাইন ইত্যাদি।
  • JavaScript: ওয়েবসাইটে ইন্টারঅ্যাকশন বা গতিশীলতা আনতে জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয় হয়। যেমন: বাটনে ক্লিক করলে নতুন কিছু দেখা, মেনু খোলা/বন্ধ হওয়া, ফর্ম ভ্যালিডেশন ইত্যাদি। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, যেমন ঘরের কোন সুইচে চাপ দিলে কোন ফ্যান বা লাইট টা চালু হবে ইত্যাদি।

আপনার কাছে এগুলো এলোমেলো মনে হতে পারে, কিন্তু চিন্তার কারণ নেই আমি আমার ওয়েবসাইটের মধ্যে HTML, CSS, JavaScript সম্পর্কে আলাদা আর্টিকেল লিখে সেখানে বিস্তারিত বুঝানোর চেষ্টা করেছি আপনি চাইলে আমার ওয়েবসাইটটি একবার ঘুরে দেখে আসতে পারেন।

যাইহোক, কথা হলো একজন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট হতে হলে অবশ্যই, আপনাকে HTML, CSS, JavaScript জানতেই হবে। এগুলোর কোন বিকল্প নেই, এখানে বলে রাখি JavaScript হলো একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এবার, আপনি তো এগুলো শিখবেন। এগুলোকে আরো সহজ করে ব্যবহার করার জন্য কিছু বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো নিচে বলা হয়েছে, কিন্তু খেয়াল রাখবেন আগে এই তিনটি অবশ্যই জানতে হবে তারপর সহজ পদ্ধতি গুলো আপনি চাইলে ব্যবহার করতে পারবেন এগুলো আপনার কাজকে আরো সহজ করে দিবে।

ফ্রন্ট-এন্ড এর জন্য জনপ্রিয় ফ্রন্টএন্ড লাইব্রেরি ও ফ্রেমওয়ার্ক

  • React.js (Facebook এর তৈরি)
  • Vue.js
  • Angular (Google এর তৈরি)
  • Bootstrap (CSS Framework, দ্রুত ডিজাইন করার জন্য)
  • Tailwind CSS (Utility-first CSS framework)

আপনি যদি HTML, CSS, JavaScript ভালোভাবে জানেন তাহলে উপরে উল্লেখিত জনপ্রিয় ফ্রন্টএন্ড লাইব্রেরি ও ফ্রেমওয়ার্ক গুলো আপনার কাজ আরো সহজ করে দিবে, মানে HTML, CSS, JavaScript দিয়ে একটি কাজ করতে যদি আপনার ১০ মিনিট সময় লাগে সেই কাজটি আপনি লাইব্রেরি ও ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে মাত্র অর্ধেকেরও কম সময়ের মধ্যে করে ফেলতে পারবেন।

বলে রাখা ভালো, এখানে কিন্তু সব জনপ্রিয় ফ্রন্টএন্ড লাইব্রেরি ও ফ্রেমওয়ার্ক শেখার প্রয়োজন নেই। আপনি উপরের লাইব্রেরি ও ফ্রেমওয়ার্ক থেকে যেকোন দুটি বেছে নিবেন সেগুলো শিখলেই হবে। যেমন; Bootstrap এবং Tailwind CSS এই দুটি থেকে যেকোন একটি শিখলে হবে এবং React.js, Vue.js ও Angular এই তিনটি থেকে যেকোন একটি শিখলে হবে।

ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার কি কি কাজ করে থাকে?

ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপাররা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে যেমন;

  • ওয়েব ডিজাইন অনুযায়ী পেজ তৈরি করা
  • রেস্পন্সিভ ডিজাইন তৈরি করা (মোবাইল, ট্যাব, ডেস্কটপে সঠিকভাবে দেখার জন্য)
  • UI/UX উন্নত করা
  • API থেকে ডেটা নিয়ে দেখানো
  • ব্রাউজার কম্প্যাটিবিলিটি ঠিক রাখা

একজন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট মোটামুটি এই কাজ গুলোই করে থাকে। এছাড়াও, আরো কিছু ছোটখাটো কাজ থাকতে পারে সেগুলো আপনি সময়ের সাথে সাথে জেনে নিতে পারবেন এটা কোন ব্যাপার না।

ফ্রন্টএন্ড শেখার পর আপনি কী কী তৈরি করতে পারবেন?

  • ওয়েবসাইট (ব্লগ/নিউজ ওয়েবসাইট, ই কমার্স ইত্যাদি)
  • ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন
  • ড্যাশবোর্ড
  • পোর্টফোলিও সাইট
  • ই-কমার্স ফ্রন্টএন্ড
  • ব্লগ বা নিউজ সাইট

মনে রাখবেন, একজন ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার সম্পুর্ন ওয়েবসাইট বানাতে পারে না, শুধুমাএ ওয়েবসাইটের সামনের অংশ ডিজাইন করতে পারে। তাই, আপনি যদি মনে করেন আপনি ফ্রন্ট এন্ড শিখে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইট বানাই ফেলবেন তাহলে আপনি এখনো ভুল জায়গায় আছেন। সেক্ষেত্রে আপনার আরেকটু শিখতে হবে এবং ফ্রন্ট এন্ড সম্পর্কে জানতে হবে।

একজন ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার কত টাকা ইনকাম করে?

বাংলাদেশের একজন ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার মাসে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকারও বেশি ইনকাম করতে পারে, এটা নির্ভর করে তার স্কিল বা দক্ষতার উপর। আপনার যদি ২-৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি হয়তো আরেকটু বেশি ইনকাম করতে পারেন। যদি আপনি ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্ট শিখে ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে হয়তো কিছুটা কম ইনকাম করতে পারেন অথবা মাসে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারেন, যদিও এটা অনেক কঠিন।

একজন ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার কোথায় চাকরি করে?

একজন ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার সাধারণত বিভিন্ন সফটওয়ার কোম্পানি, আইটি ফার্ম ও ডিজিটাল এজেন্সি, স্টার্টআপ ও কর্পোরেট কোম্পানিতে বা রিমোট জব করে থাকে এবং অনেকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে থাকে। এছাড়াও, নিজের প্রজেক্ট বা ব্যবসা ও করা যেতে পারে।

এবার আসুন, জেনে নেওয়া যায় ব্যাক এন্ড ডেভেলপমেন্ট কাকে বলে, ব্যাক এন্ড ডেভেলপার হওয়ার জন্য কি কি জানতে হবে এবং একজন ব্যাক এন্ড ডেভেলপার কোথায় কাজ করতে পারে ইত্যাদি সম্পর্কে।

ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্ট (Backend Development)

ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্ট হলো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের সেই অংশ তৈরি করা, যা ব্যবহারকারীরা সরাসরি দেখতে পান না কিন্তু এগুলো হলো ওয়েবসাইটের মূল ভিত্তি। যেমন; ফাংশনালিটি, সার্ভার, ডাটাবেজ, লগইন, ডেটা সংরক্ষণ, তথ্য প্রসেসিং ইত্যাদি। আমি যদি আপনাকে আরো সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি তাহলে, ফ্রন্ট এন্ড হচ্ছে আপনি যা দেখেন আর ব্যাক এন্ড হচ্ছে যা আপনি দেখেন না কিন্তু সেটা ছাড়া কোন ওয়েবসাইটই কাজ করে না।

আমি মনে করি আপনি ফ্রন্ট এন্ড সম্পর্কে জানেন, ধরুন আপনি একটি ফ্রন্ট এন্ড ওয়েবসাইট বানাইছেন এখন এই ওয়েবসাইটটি মানুষকে দেখানোর জন্য এবং এটি মানুষ ব্যবহার করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি সার্ভারে হোস্ট করতে হবে তাহলে ইউজার বা মানুষ সেটা দেখতে ও ব্যবহার করতে পারবে। শুধু যে সার্ভার মানে ব্যাকএন্ড বিষয়টি এমন না সার্ভার ব্যাকএন্ড এর একটি অংশ এর সাথে আরো অনেক কিছু রয়েছে যা একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপারকে অবশ্যই শিখতে হবে। যাইহোক, চিন্তার কিছু নেই নিচে সেই সম্পর্কে ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্টে যা থাকে

আগেই বলেছিলাম, শুধু মাএ সার্ভার ব্যাকএন্ড এর অংশ নয় এর মধ্যে যা যা রয়েছে সেগুলো হলো:

  • সার্ভার (Server): যেখানে ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে এবং ব্যবহারকারীর অনুরোধ প্রসেস হয়।
  • ডেটাবেস (Database): ব্যবহারকারীর তথ্য, পোস্ট, পণ্য, অর্ডার ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয় (যেমন: MySQL, MongoDB, PostgreSQL)।
  • ব্যাকএন্ড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: যেমন: PHP, Python, Node.js, Java, Ruby ইত্যাদি।
  • API (Application Programming Interface): ফ্রন্টএন্ড ও ব্যাকএন্ডের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম।

একটি সাধারণ ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে উপরের উল্লেখিত এই জিনিস গুলো অবশ্যই বাধ্যতামূলক, কিন্তু প্রোফেশনাল ওয়েবসাইট বা বলা যেতে পারে ফেসবুক, টুইটারের মতো বিশাল বড় বড় ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে অনেক কিছু প্রয়োজন হতে পারে। যাইহোক, আমরা এখন এদিকে না যায়। এছাড়াও, অনেকে জনপ্রিয় সিএমএস (ওয়ার্ডপ্রেস) ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানিয়ে থাকে এখানে ওয়ার্ডপ্রেসকেও একটি ব্যাকএন্ড বলা যেতে পারে।

ব্যাকএন্ড ডেভেলপার কি কি কাজ করে থাকে?

একজন সাধারণ ব্যাকএন্ড ডেভেলপার যে সকল কাজ করে থাকে সেগুলো হলো:

  • ডেটাবেস ডিজাইন ও ম্যানেজ করা
  • ইউজার অথেন্টিকেশন (লগইন/সাইনআপ) তৈরি
  • সার্ভারে ডাটা প্রসেসিং ও স্টোর করা
  • API তৈরি করে ফ্রন্ট এন্ডে তথ্য পাঠানো
  • ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

উপরের উল্লেখিত কাজগুলো ছাড়াও একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপারকে সময়ের সাথে সাথে আরো অনেক কিছু করতে হয়, না ব্যক্তি ও কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে থাকে।

ব্যাকএন্ড শেখার পর আপনি কি কি তৈরি করতে পারবেন?

একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপার সাধারণত অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল সিস্টেম তৈরি করতে সক্ষম হয়, যা ফ্রন্ট এন্ড ডেভেলপার পারে না। একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপার যেসব জিনিস বানাতে পারে সেগুলো হলো;

  • ইউজার অথেন্টিকেশন সিস্টেম
  • ডাটাবেজ সিস্টেম
  • API (Application Programming Interface)
  • ই-কমার্স ফিচার
  • ড্যাশবোর্ড এবং অ্যাডমিন প্যানেল ডেটা হ্যান্ডলিং
  • রিয়েল টাইম ডাটা সিস্টেম
  • ফাইল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
  • ইমেইল ও নোটিফিকেশন সিস্টেম
  • ব্লগ বা নিউজ সাইটের ব্যাক এন্ড

ব্যাকএন্ড শেখার পর যে শুধু উপরে উল্লিখিত কাজ গুলো করতে পারে বিষয়টি এমন না, সময়ের সাথে সাথে আরো অনেক কিছু তাদের করতে হয়। এটা নির্ভর করে কাজের ধরন এবং পরিস্থিতির উপর। যেমন; ওয়েবসাইট সিকিউরিটি যা ওয়েবসাইটের প্রধান অংশ। পরিস্থিতির শিকার হলে তাদের এই কাজটিও করতে হবে।

একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপার কত টাকা ইনকাম করে?

একজন ব্যাক এন্ড ডেভেলপার কত টাকা ইনকাম করে সেটা নির্ভর করে তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, কাজের ধরণ (ফুল-টাইম, ফ্রিল্যান্সিং, রিমোট), এবং দেশ ইত্যাদি অনেক কিছুর উপর।

বাংলাদেশে একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপারের আয় (প্রতি মাসে) ২০,০০০ – ৪০,০০০ টাকা নতুন (ফ্রেশার), ৪০,০০০ – ৭০,০০০ টাকা (১ থেকে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা), ৫০,০০০ – ১,৫০,০০০+ টাকা (সিনিয়র লেভেলে) যা অনেক বছর সময় লাগে। এছাড়াও, অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করে সেক্ষেত্রে মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে অনেকেই যা অনেক বেশি কঠিন। বিদেশে রিমোট জব করলে সেক্ষেত্রে একজন ব্যাক এন্ড ডেভেলপার প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সহজেই ইনকাম করতে পারে যদি সেই পরিমাণে স্কিল থাকে।

একজন ব্যাক এন্ড ডেভেলপার কোথায় কাজ করে?

একজন ব্যাকএন্ড ডেভেলপার অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন, কারণ প্রতিটি ওয়েবসাইট, অ্যাপ, বা সফটওয়্যারের ব্যাকএন্ড থাকে এবং সেটা পরিচালনার জন্য দক্ষ ডেভেলপার প্রয়োজন হয়। সাধারণত ব্যাকএন্ড ডেভেলপাররা ফ্রন্ট এন্ড এর মতো সফটওয়্যার কোম্পানি, আইটি ফার্ম ও অ্যাজেন্সি, ই-কমার্স কোম্পানি, ব্যাংক ও ফিনান্স প্রতিষ্ঠান, টেলিকম কোম্পানি, . স্টার্টআপ কোম্পানি, বিদেশি রিমোট কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ কাজ করে থাকে।

এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ফুলস্ট্যাক সম্পর্কে, এটি আহামরি কিছু না যে ব্যক্তি ফ্রন্ট এন্ড এবং ব্যাকএন্ড দুটি জানে তাকে বলা হয় ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার।

ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার (Full Stack Developer)

Full Stack Developer হলেন সেই ডেভেলপার যিনি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের উভয় অংশ—Frontend (যা ব্যবহারকারী দেখে) এবং Backend (যা সার্ভারে কাজ করে)—দুটি নিয়ে কাজ করতে পারে। এটি আহামরি কিছু না সহজ ভাষায় ব্যাকএন্ড এবং ফ্রন্টএন্ড উভয় মিলে ই ব্যাকএন্ড।

একজন ফুলস্ট্যাক ডেভেলপারকে যা যা জানতে হবে সেগুলো হলো:

  • HTML
  • CSS
  • JavaScript
  • React
  • Vue.js
  • Node.js
  • Express.js
  • PHP
  • Python
  • Laravel
  • MySQL
  • MongoDB
  • PostgreSQL
  • Git
  • GitHub
  • Netlify
  • Vercel
  • Heroku
  • Docker
  • cPanel

অর্থাৎ, ফ্রন্ট এন্ড এর জন্য যা যা শিখতে হবে সেগুলো এবং ব্যাকএন্ড এর জন্য যা যা শিখতে হবে সেগুলো।

একজন ফ্রন্ট এন্ড ও ব্যাকএন্ড ডেভেলপার যেখানে কাজ করে ঠিক ফুল স্ট্যাক ডেভেলপার ও সেখানেই কাজ করে থাকে। তবে, ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার দের বেতন কিছুটা বেশি থাকে।

একজন ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারে। এটি নির্ভর করে কোন কোম্পানিতে কাজ করে, কাজের ধরন ইত্যাদির উপর। বিদেশে রিমোট জব করতে পারলে সেক্ষেত্রে একজন বাংলাদেশি চাইলে মাসে ২-৪ লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারে যা সম্পূর্ণ নির্ভর করে নিজের দক্ষতার উপর। বলাটা সহজ হলেও এটি অনেক বেশি কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক।

শেষ কথা

আশা করি আর্টিকেলটা আপনাকে অনেক উপকার করেছে, আমি বিশ্বাস করি এই আর্টিকেল থেকে আপনি অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলে আমি যে সকল তথ্য শেয়ার করেছি সেগুলো আমি আগে রিচার্জ করেছি এরপর এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করেছি এরপরে ও কিছু তথ্য ভুল থাকতে পারে। যদি আমার অজান্তে কিছু ভুল থেকে থাকে তাহলে ক্ষমা করবেন এবং আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাকে মেইল (নিচে দেওয়া আছে) করতে পারেন, ধন্যবাদ।